মোস্তাফিজ আমিন, ভৈরব॥
কিশোরগঞ্জের ভৈরবের চন্ডিবের ও ভৈরবপুর এলাকায় পৃথক দুই সংঘর্ষে উভয়পক্ষের কমপক্ষে অর্ধশত লোক আহত হয়েছে। এই সময় ভাংচুর হয়েছে ৩০টির মতো বাড়ি-ঘর। আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে একটি মার্কেটের ১০টি দোকান। এ ঘটনায় পুলিশ ১৫ জনকে আটক করেছে।
অটো রিকশা আটকে রাখার জেরে
দফায় দফায় সংঘর্ষে ৩০ জন আহত
রোববার (২৪ আগস্ট) দিবাগত রাত ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত পৌর শহরের চন্ডিবের দক্ষিণ পাড়া এলাকার পাগলা বাড়ি ও পশ্চিম পাড়ার যুবকদের মাঝে এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের কমপক্ষে ৪০ জন আহত হয়েছে। এ সময় ভাংচুর করা হয়েছে কমপক্ষে ৩০টি বাড়ি-ঘর। এ ঘটনায় পুলিশ দুইপক্ষের ১৫জনকে আটক করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৩ জুলাই বুধবার দুপুরে চন্ডিবের দক্ষিণ পাড়ার পাগলা বাড়ির পাপনের সাথে এক রিকশা চালককের বাকবিতন্ডা হয়। এসময় পাপন অটোরিকশাটি আটকিয়ে রাখে। পরে পশ্চিম পাড়ার মিন্টু মিয়া ও খোকন মিয়াসহ স্থানীয়রা অটোরিকশাটি উদ্ধার করে অটোচালককে ফিরিয়ে দেয়।
অটোরিকশাটি ছাড়িয়ে দেওয়ার সময় মিন্টু ও খোকন মিয়ার সাথে পাপনের তর্কাতর্কি হয়। এ ঘটনার জেরে গত ২৬ জুলাই শনিবার উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে। ওইদিন উভয় পক্ষের কমপক্ষে ১৫ জন আহতসহ অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়।
পরে ঘটনাটি স্থানীয় নেতৃবৃন্দ মীমাংসা করে দিলেও যুবকদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে উত্তেজনা রয়ে যায়। এরই জেরে ২৪ আগস্ট রোববার রাত ১০টা থেকে রাত ১টা তাদের মধ্যে সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষ চলাকালে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতারা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনে।
পরিস্থিতি শান্ত হলে তাদের স্বজনরা আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান।
আহতদের মধ্যে সাদির মিয়া (২০), ফরহাদ (২৫), সামির মিয়া (১৫), রিদওয়ান (১৬) সামিরুল ইসলাম (১৮), মারুফ মিয়া (১৯), আল আমিন (১৫), আল আমিন (১৮), শাহ আলম (১৮), জাকির হোসেন (২২), মোবাশ্বির (১৭), সাব্বির (২৫), সানাই (২৪), রাকিব মিয়া (২৮), ইমরান মিয়া (২৮) উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিলে সানাইকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং রিদওয়ান ও সাব্বিরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ভৈরবপুর কসাইহাটি ও উত্তর পাড়ার মাঝে সংঘর্ষে
১০ জন আহত॥ আগুনে পুড়ল ১০ দোকান
এদিকে একই রাতে (২৪ আগস্ট রোববার) শহরের ভৈরবপুর দক্ষিণ পাড়া কসাইহাটি ও উত্তরপাড়া এলাকার যুবকদের মাঝে সংঘর্ষে উভয়পক্ষের কমপক্ষে ১০জন আহতের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় উত্তর পাড়ার মনামরা ব্রীজ সংলগ্ন এলাকার একটি মার্কেটের ১০টি দোকান পুড়ে যায় প্রতিপক্ষের দেওয়া আগুনে। এতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছেনে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট নিরীহ ব্যবসায়ীরা।
খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে দমকলকর্মীরা আগুন নেভায়।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, ওইদিন রাত ১১টার দিকে ভৈরব বাজার কলাপট্টি এলাকার এশা হোটেল নামের একটি আবাসিক হোটেলের ঝাড়ুদার হোটেল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার সময় ইটের কণাসহ ময়লা নীচে ফেললে উত্তর পাড়া এলাকার এক যুবকের উপর পরে। এ সময় ঝাড়ুদার ও হোটেল ম্যানেজারের সাথে ওই যুবকের বাকবিতন্ডা হয়।
এই ঘটনার জেরে রাত ১২টার দিকে ভৈরবপুর উত্তরপাড়া ও দক্ষিণ পাড়ার কসাইহাটির যুবকদের মাঝে সংঘর্ষ বাধে। উত্তর পাড়ার মনামরা ব্রীজ সংলগ্ন এলাকায় ঘণ্টাব্যাপী চলে এই সংঘর্ষ। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের যুবকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় দুই পক্ষের লোকজন মাইকে ঘোষণা দিয়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। সংঘর্ষে বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়।
সংঘর্ষের এক পর্যায়ে কসাইহাটির লোকজন উত্তর পাড়ার মনামরা এলাকার একটি মার্কেটে আগুন ধরিয়ে দিলে ১০টি দোকান পুড়ে যায়।
পৃথক এই দুই সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে চাইলে ভৈরব সার্কেলের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার নাজমুস সাকিব জানান, পরিস্থিতি এখন শান্ত আছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় আইন শৃংখলা বাহিনী প্রস্তত আছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
https://slotbet.online/