মোস্তাফিজ আমিন, ভৈরব॥
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে শিশু-কিশোর চালকরা চালাচ্ছে রিচার্জেবল অটোরিকশা বা ইজিবাইক। এইসব অনভিজ্ঞ এবং অপ্রাপ্ত বয়সের চালকরা সড়ক-মহাসড়কগুলোতে অটোরিকশাগুলো নিয়ে দাপিয়ে বেড়ালেও স্থানীয় প্রশাসন যেনো নির্বিকার। ফলে প্রশাসনের আস্কারা পেয়ে একশ্রেণির অতিমুনাফালোভী মালিকরা অভাবগ্রস্ত পরিবারের শিশু-কিশোরদের হাতে তুলে দিতে উৎসাহিত হচ্ছেন তাদের ইজিবাইক। এতে করে প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। বাড়ছে হতাহতের ঘটনা। ঝরে যাচ্ছে মূল্যবান প্রাণ। দুর্ঘটনার ক্ষত নিয়ে কষ্টের জীবন যাপন করছেন বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা। ভৈরবের ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, ভৈরব-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং প্রায় ১০টিরও বেশী আভ্যন্তরীণ সড়কসহ ভৈরব বাজার এলাকার অলিগতিতে প্রতিদিন প্রায় শত শত রিচার্জেবল অটোরিকশা বা ইজিবাইক চলাচল করে। মহাসড়কগুলোতে এই জাতীয় যান চলাচল সরকারীভাবে নিষিদ্ধ থাকলেও, আইনটির প্রয়োগ এখানে ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের খামখিয়ালিপনায়, অভিযোগ স্থানীয়দের। অপরদিকে এইসব পথে চলাচলকারী ইজিবাইকগুলো চালাচ্ছে শিশু-কিশোর চালকরা। একশ্রেণির অতিমুনাফালোভী মালিক গরীব পরিবারগুলোর দারিদ্রতার সুযোগে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ টাকা মজুরিতে ওইসব শিশু-কিশোরদের হাতে তুলে দিচ্ছেন ইজিবাইকের চাবি। বয়সের স্বল্পতায় অল্পজ্ঞান, প্রশিক্ষণের অভাবে অনভিজ্ঞতা ইত্যাদি কারণে ড্রাইভিং করতে গিয়ে প্রায় প্রতিদিনই মারাত্মক দুর্ঘটনায় পড়ছে ওইসব চালকরা। এতে করে ঘটছে হতাহতের ঘটনা। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন যাত্রী সাধারণ। এসব চালকদের হাত থেকে জান-মাল রক্ষায় দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ আশা করছেন এলাকাবাসী। মুনাফাখোর মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাসহ শিশু-কিশোর চালকদের ইজিবাইক চালনা থেকে অবিলম্বে সরানোর দাবি জানিয়েছেন নিরাপদ সড়ক চাই, ভৈরবের সাধারণ সম্পাদক মো: আলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, আমাদের সংবিধানে শিশু-কিশোরদের ঝুঁকিপূর্ণশ্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভৈরব পৌরসভার সহকারি লাইসেন্স ইন্সপেক্টর মো. তুহিনুর রহমান বলেন, আমরা লাইসেন্স দেওয়ার সময় ভোটার আইডিকার্ড দেখে দেই। ফলে ১৮ বছরের নীচের কারো লাইসেন্স পাওয়ার সুযোগ নেই। অনেকক্ষেত্রে মালিকরা তাদের লাইসেন্সকৃত রিকশা-অটোরিকশা শিশু-কিশোরদের হাতে তুলে দেয়, মুনাফার লোভে। এ ক্ষেত্রে অভিযোগ এলে আমরা ওইসব মালিকদের লাইসেন্স বাতিলসহ বিভিন্ন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি। নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও মহাসড়কগুলোতে ইজিবাইক চলাচল করছে এবং সেগুলো চালাচ্ছে অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালকরা-এই বিষয়ে জানতে চাইলে ভৈরব হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: সাহাবুর রহমান জানান, এইসব চালকদের প্রায়ই আটক করে জরিমানা করা হচ্ছে। পাশাপাশি চলছে সচেতনতামূলক কার্যক্রম। যাতে করে এ ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় শিশু-কিশোররা না আসে এবং তাদের কেউ নিয়োগ না দেন। এ বিষয়ে ভৈরব পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শবনম শারমিন জানান, ঝুঁকিপূর্ণ পেশাসহ সকল প্রকার শিশুশ্রম আইনত:দন্ডনীয় অপরাধ। তা বন্ধে বিভিন্ন সময় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে মালিকদের জরিমানা করা হয়। তবে দারিদ্রতার কারণে অনেক শিশু-কিশোর ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে বাধ্য হয়। শিশুশ্রম বন্ধে আমরা সভা-সেমিনার করে সচেনতা বাড়াতে কাজ করছি। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, অটোরিকশা চালনার মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুদের নিয়োগ দিলে আমরা মালিকদের লাইসেন্স বাতিলসহ আর্থিক জরিমানা করে থাকি।
https://slotbet.online/