• শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৩০ অপরাহ্ন
  • [gtranslate]
শিরোনাম:
কটিয়াদীতে ব্রি ধান- ৪৯ জাতের নমুনা শস্য কর্তন কুঁড়াভর্তি ট্রাক থেকে ২৪০ বস্তা ভারতীয় জিরা উদ্ধার ফুলেল শুভেচ্ছা ও নিসচা পরিবারের ভালোবাসায় সিক্ত দেশসেরা রোড ফাইটারে ভূষিত সাংবাদিক মোঃ আলাল উদ্দিন নিরাপদ খাদ্য আদালতের অভিযানে ভৈরবে চার প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে ৬ লাখ টাকা অর্থদন্ড ভৈরব জেলা বাস্তবায়নের দাবিতে এবার ইতালিতে মানববন্ধন কুলিয়ারচরে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু কটিয়াদীতে শিক্ষক-কর্মচারী ফোরামের কমিটি গঠন সভাপতি মিজানুর রহমান, সম্পাদক মাসুম পাঠান ভৈরব জেলা বাস্তবায়নের দাবিতে মহাসড়কে নফল নামাজ আদায় কুলিয়ারচরে পুলিশের গুলিতে নিহত দুই শহীদ স্মরণে সভা কটিয়াদীতে পল্টন ট্রাজেডি দিবসে জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল

ভৈরবে ২৩০ কেভি জাতীয় গ্রীড লাইনের টাওয়ারের নীচে কয়েকশ পরিবারের বাস॥ দুর্যোগে দুর্ঘটনায় ঘটতে পারে মানবিক বিপর্যয়

মোস্তাফিজ আমিন: / ২৩৯ Time View
Update Time : বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

মোস্তাফিজ আমিন, ভৈরব॥
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ২৩০ কেভি জাতীয় গ্রীড লাইনের বৈদ্যুতিক সুউচ্চ টাওয়ারের নীচে এবং চারপাশে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে ঋষি সম্প্রদায়ের কয়েকশ পরিবারের লোকজন। সেখানে দীর্ঘদিন যাবত অত্যন্ত নাজুক আর মানবেতর জীবন যাপন করলেও, সেদিকে যেনো ভ্রুক্ষেপ নেই স্থানীয় প্রশাসন অথবা বিদ্যুৎ বিভাগের। বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড় বা ভূকম্পে টাওয়ারটি ভেঙ্গে পড়লে ঘটতে পারে মানবিক বিপর্যয়। জীবন বিপন্ন হতে পারে ওইখানে বসবাসরত শত শত মানুষের।

জানাযায়, অবিভক্ত পাকিস্থান আমলের গোড়ার দিকে সিলেট, বি-বাড়িয়া, ময়মনসিংহ প্রভৃতি এলাকা থেকে বন্দর ও সমৃদ্ধ বাণিজ্যনগরী ভৈরবে এ সম্প্রদায়ের আগমন ঘটে। বসবাস শুরু করে বর্তমান কাঠপট্টি এলাকার সরকারি খাসভূমিতে। এলাকার বিভিন্ন পূজা-পার্বণ, উৎসবে গান-বাজনা করে এদের জীবন চলতো।

বাংলাদেশ স্বাধীন হবার ৫/৬ বছর আগে ঋষি সম্প্রদায়ের বসবাসের সেই ভূমি তৎকালীন সরকারের ভুমি অধিদপ্তর থেকে বন্দোবস্ত আনেন এলাকার এক প্রভাবশালী ব্যক্তি। স্বাধীনতার ১/২ বছর পর বন্দোবস্ত সূত্রে মালিকের উত্তরাধিকাররা তাদেরকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে ওই ভিটে মাটি থেকে। সে সময় স্থানীয় রাজনৈতিক, সামাজিক ও জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় মেঘনা-ব্রক্ষ্মপুত্র নদের মোহনায় ২৩০ কেভি বৈদ্যুতিক টাওয়ারের আশে পাশে বসবাস শুরু করেন।

সেখানে অস্থায়ীভাবে বসবাস শুরু হলেও, সেটিই এখন তাদের স্থায়ী নিবাস। বর্তমানে সেখানে টাওয়ারের আশপাশসহ নীচের বাউন্ডারি দেওয়ালের ভেতরে সুড়ঙ্গ কেটে ঢুকে ঘর তৈরি করে বাস করছেন লোকজন। উপরে ও চারপাশে সুউচ্চ বৈদ্যুতিক টাওয়ার। অজানা ঝুঁকির আশংকা নিয়ে প্রতিটি দিন-ক্ষণ কাটে কযেকশ পরিবারের ৪/৫ হাজার ছেলে, বুড়ো, শিশুর।

মাঝে-মধ্যে ছোটখাট দুর্ঘটনা যে ঘটছে না, তা কিন্তু নয়। ঘটছে। আহতও হচ্ছে এখানকার লোকজন। অনেক সময় টাওয়ারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ভেঙে পড়ে এইসব ঘরের উপর। ঘর ভেঙে যায়। আহত হয় লোকজন। কিন্তু ছোট খাট বলে এইসব দুর্ঘটনার খবর কোথাও প্রচার হয় না। তাদের আশংকা, যদি কখনও ঘূর্ণিঝড় বা ভূমিকম্প-ভূমি ধ্বস বা নদী ভাঙনে টাওয়ার ভেঙে পড়ে, তখন কি অবস্থা দাঁড়াবে তাদের ভাগ্যে।

স্থানীয় লোকজন জানায়, ২০১৭ সালের ১ লা মে সোমবার রাতে ভৈরবের কালীপুর এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া এক ঘূর্ণিঝড়ে আশুগঞ্জ-সিরাজগঞ্জ ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইনের একটি সুউচ্চ টাওয়ার বিধ্বস্ত হয়েছিলো। টাওয়ারটির আশে পাশে বাড়ি-ঘর না থাকায় কোনো প্রাণহানী ঘটেনি সেখানে। কিন্তু এমনটি যদি এখানে ঘটে, তবে মানবতার চরম বিপর্যয় ঘটবে। তখন আফসোস ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না।

শত বছরেও একমুঠো জমির মালিক হতে না পারার আক্ষেপ নিয়ে এখানকার অধিবাসী রাম কুমার ঋষী দাস বলেন, ভৈরবে সরকারের কতো খাস জমি বৈধ, অবৈধভাবে দখল করে আছে প্রভাবশালীরা। মুজিব জন্মশত বর্ষকে উপলক্ষ্য করে বিগত সরকার ভৈরবসহ সারা দেশে সাড়ে ৭ লাখ পরিবারকে জমিসহ পাকা ঘর তৈরি করে দিয়েছেন। অথচ আমাদের বেলায় কিছুই নেই। কি দোষ আমাদের ?

সুউচ্চ বৈদ্যুতিক টাওয়ারের নীচে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছে ঋষি সম্প্রদায়ের আগামী প্রজন্মের শিশুরা। এ নিরাপত্তাহীন জীবনে যে কোন মূহুর্তে যে কোন ধরণের দুর্ঘটনায় নীভে যেতে পারে শত শত জীবন প্রদীপ। সরকার, সুশীল সমাজ-কারো কোন ভাবনাই যেনো নেই এ বিষয়ে। ক্ষোভ আর দু:খ নিয়ে জানালেন বৃদ্ধা কমলা ঋষী দাস, অনিদ্র ঋষী দাস আর স্মৃতি রানী ঋষী দাস।

টাওয়ারের নীচ দিয়ে পশুর খোয়ারে ঢুকার মতো করে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করতে হয় তাদের। নেই শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পয়:নিস্কাশনের ব্যবস্থা। নেই বিশুদ্ধ পানি, চলাচলের ব্যবস্থা। এই দু:সহ বসবাস ও জীবন থেকে সুস্থ-সুন্দর স্বাভাবিক জীবনে পুনর্বাসিত হতে চায় অধিকার বঞ্চিত ঋষি সম্প্রদায়ের লোকেরা। জানালেন বাংলাদেশ দলিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলন, কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি স্বপন কুমার ঋষি দাস।

জাতীয় সঞ্চালন লাইনের সুউচ্চ টাওয়ারের মতো একটি অতিজনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নীচে এবং আশে পাশে কি করে এমন একটি ঘনবসতিপূর্ণ বসতি গড়ে উঠলো এবং দীর্ঘদিন যাবত অতিঝুঁকি নিয়ে কয়েক হাজার মানুষ কি করে বসবাস করে আসছে ?

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ভৈরব সরবরাহ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান মাহমুদ এলাহী জানান, জাতীয় গ্রীড লাইনের টাওয়ার দেখ-ভালের দায়িত্ব তাঁর কার্যালয়ের নয়। সেটি দেখাশোনা করে পাওয়ার গ্রীড কোং বাংলাদেশ-(পিজিসিবি)।

জানার জন্য ফোন করা হয় দায়িত্বে থাকা পাওয়ার গ্রীড কোং বাংলাদেশ-(পিজিসিবি), নরসিংদীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুর কবিরকে। পরিচয় দিয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে এড়িয়ে যেতে চাইলেও, ভৈরব পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলীর বরাতে প্রশ্ন করলে ওই কর্মকর্তা জানান, এমনটি হলে তার দপ্তর খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

জানতে চাইলে ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক শবনম শারমিন বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা ছিলো না। তিনি এই প্রতিনিধির মাধ্যমে ছবি দেখে অবগত হয়েছেন। কিছু পরিবার জাতীয় সঞ্চালন লাইনের টাওয়ারের নীচে বসবাস করছেন ঝুঁকি নিয়ে। এটি অত্যন্ত অমানবিক। তিনি খুব শীঘ্রই সেই এলাকা পরিদর্শন করবেন। পরিদর্শন শেষে বিদ্যুৎ বিভাগকে চিঠি দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগী হতে বলবেন।

বর্তমানে ভৈরব পৌর এলাকায় সরকারি খাস ভূমি নেই। যদি তারা ইউনিয়ন পর্যায়ে পুনর্বাসিত হতে চায়, তবে তিনি তাদের পুনর্বাসনে উদ্যোগী হবেন বলেও জানালেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
https://slotbet.online/